পুনর্জন্ম – আবির কর্মকার
জেলে থাকা কয়েদি যার মধ্যে একটা ভালো মানুষটা এখনো রয়ে গেছে.., জেলের ঐ অন্ধকার কুঠরীতে যেখানে হয়তো একটা আলোর রেখা প্রবেশ করে, সেখানে হয়তো নিজের মধ্যে একটা অদৃশ্য চাপ অনুভব হয়!! সেই কয়েদি ভুলের অনুতাপগুলোকে সঙ্গে নিয়ে চলতে থাকে। তো তখন তার একমাত্র সম্বল আশাকে ধীরে ধীরে ক্ষয়ীভূত করতে থাকে নির্দ্বিধায়, নির্বিচারে।
তারপর সে যখন তার সাজা কেটে দশ বছর পর, জেলের গন্ডির বাইরে পা রাখে ঠিক সেই মুহূর্ত থেকেই তার মধ্যে একটা ‘আমি’ বলে অনুভব শুরু হয় যেটা হয়তো সে জেলে থাকার আগেও করেছে, হয়তো সে সেটা ভুলে যায়।
সারি সারি স্তর দিয়ে সাজানো দমিয়ে রাখা মন থেকে স্তরগুলো যেন হঠাৎ করে সরে যেতে থাকে। শরীরের ভেতরে এমন একটা অনুভব হয় যেন তার সত্তা ওপরের দিকে উঠতে থাকে তীব্র বেগে। হয়তো আবেগ আর বুদ্ধির মধ্যে দ্বন্দ শুরু হয়, যেটা ঐ সত্তাকে আবার দাবানোর চেষ্টা করে, কিন্তু তার উপলব্ধি আর সেই হিংস্র কাজটাকে আর সম্পূর্ণ করতে দেয় না..
একটা বাচ্চা যার মধ্যে একটু একটু হুঁশ তৈরি হয়েছে, যার উপর সামাজিক বোঝা চাপেনি, সে যেভাবে বাইরের জগৎকে দেখে ঠিক সেইরকমভাবে কয়েদিটা তার এককোনে পড়ে থাকা ভালো মানুষ নতুন করে যেন জন্ম নিয়ে দেখতে শুরু করে। সে অনুভব করে তার প্রতিটা নিঃশ্বাস তার শরীরে শ্রীহরন সৃষ্টি করে।
তার মনে হয় ঐ সামনের গোলাপ গাছটার ফুলগুলোতে নিপুন ভাবে রং ঢেলে দিয়েছে, কোয়েলের আওয়াজটা যেন তার কাছে মনমুগ্ধকর; যেন কেউ প্রকৃতিকে কৃত্রিমভাবে অতি নিপুনতার সাথে তৈরি করেছে। সময়টা যেন শেষ অদ্ভুতভাবে থমকে গেছে। আকাশে মেঘগুলো যেন মেঘ নয় যেন খুব সুন্দরভাবে কারুকার্য করা ত্রিমাত্রিক চিত্র..
হঠাৎ করে তার ডান চোখের কোনা থেকে টুপ করে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে। সে ভাবে প্রকৃতির এই অপূর্ব সৃষ্টি, শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ। তাই সে নিজে একটা অপূর্ব সৃষ্টি হয়ে কীভাবে প্রকৃতির সৃষ্টির উপর আঘাত হানতে পারে?! এই অমূল্য উপলব্ধি থেকে তার মানবতার জন্ম হয়।
একটু আলাদা স্বাদের 👍💕👏