আপনি কি সিঙ্গেল ? - সূর্যাশীষ ঘোষ - MeghPori

আপনি কি সিঙ্গেল ? – সূর্যাশীষ ঘোষ

আপনি কি সিঙ্গেল ? - সূর্যাশীষ ঘোষ Meghpori

আপনি কি সিঙ্গেল ? – সূর্যাশীষ ঘোষ

এই প্রশ্ন টা সব জায়গায় শুনতে হতে পারে , সেটা স্কুল কলেজে হতে পারে বা কোনো পারিবারিক অনুষ্ঠানে বা কোনো কর্ম ক্ষেত্রে বা ধরুন কোনো ভ্রমণে ট্রেনে, বাসে, ট্রামে । যে কোনো ক্ষেত্রে হতে পারে ।
ব্যাপার টা ঠিক এরম –
আপনি ষোলো ট্রাভেল করছেন ট্রেনে ।
আপনার টিকিট দিয়েছে থ্রি সিটারের কোণে ।।

ট্রেন চলাকালীন আপনার পাশের প্যাসেঞ্জার বলে উঠতেই পারে , “দাদা আপনি তো সিঙ্গেল আছেন তাহলে একটু অমুক নম্বর সিটের মানুষটার সাথে সিটটা এক্সচেঞ্জ করবেন “। এটা আপনাকে শুনতে হতেই পারে ।
এতটা জোর দিয়ে বলছি কারণ এটা কিছুদিন আগে আমার সাথেও ঘটেছে একটি এক্সপ্রেস ট্রেনে ।

একই ভাবে আমার টিকিট ও থ্রি সিটারের কোণেই পড়েছিল এবং আমি একা আগে ট্রেনের টিকিট কেটে নিয়েছিলাম , সেদিন রবিবার ছিল তাই ট্রেন টিকিট বুকিং প্রায় ফুল কারণ অনেকেই ছুটিতে একটু ভ্রমণে যেতে ব্যাস্ত আর পুরুলিয়া তো অনেকেরই পছন্দের জায়গা । তাই আমার পাশে দুটো সিট খালি আর অনেকের গ্রুপ দুয়ের বেশি হওয়ায় আমার পাশের সিট গুলোতে কোনো গ্রুপ টিকিট কাটেনি । পাশের দুটো সিটে একজন বেশ বয়স্ক লোক টিকিট কেটেছিল আর এক অবিবাহিত মেয়ে টিকিট কেটেছিল কিন্তু মজার বিষয় ওই অবিবাহিত মেয়েটা ওরা দুজন ( গার্লফ্রেন্ড – বয়ফ্রেন্ড ) ছিল , পাশাপাশি টিকিট না পাওয়ায় দুজনে দুটো সিঙ্গেল সিঙ্গেল জায়গায় কেটেছিল । তো আমি যথারীতি ট্রেনে উঠে আমার সিট টা গ্রহণ করলাম তারপর ওই কম বয়সী অবিবাহিত মেয়েটা পাশে এসে বসতেই আমার চোখ সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটার দিকে পড়লো এবং চোখ পড়তেই আমি লজ্জায় নিজেকে একদম কোণ ঠাসা করে দেওয়ার চেষ্টা করলাম কিন্তু বেশি সরে যেতে পারছিলাম না কারণ ট্রেনে সব সিটই এক মাপের থাকে । যায় হোক আমি লজ্জায় আর তাকাতে পারছিলাম না মেয়েটার দিকে কারণ মেয়েটা অপরূপ সুন্দরী ছিল । তারপর ট্রেন আস্তে আস্তে গতিশীল হতেই মেয়েটি বললো ,” দাদা আপনি তো সিঙ্গেল আছেন , তাহলে একটু আপনার সিট টা একজনের সাথে এক্সচেঞ্জ করবেন । বুঝতেই তো পারছেন অনেকটা যেতে হবে , তাহলে একটু কথা বলে বলে যেতাম , প্লিজ দাদা “। এমনিই শর্ট টেম্পার শোনা পাবলিক আমি , তারপরে ওসব কথা শুনে নিজের অনিচ্ছাতেই খুব চোটে গেলাম । মাথায় তখন অনেক গুলো জিনিস ঘুরতে লাগলো ফার্স্ট থিং ইজ ‘ সিঙ্গেল তো দেখতেই পাচ্ছে এত ঢাক পেটানোর কি আছে , সিংগেল না হলে থ্রি সিটারে একা কি এমনি ? তারপর তো রাগের কারণ মেয়েটা আমাকে দাদা বললো এবং আমাকে আপনি বলারই বা কি আছে , এমনটাও বয়স হয়নি যে আমাকে আপনি বলবে ‘ ।কিন্তু এসবের উত্তর খুঁজতে গেলাম না মেয়েটার কাছে , খালি কয়েকবার তাকালাম কারণ আর যায় হোক মেয়েটা দেখতে কিন্তু বেশ ভালো ।

যাই হোক তারপর রাগের এক অংশও ওই মেয়েটার উপর না চাপিয়ে “ওকে, ফাইন” বলে উঠে গেলাম । তারপর আবার বললো ,” বলছি দাদা , ওকে একটু ডেকে দিও , ও ৬৮ ( সিট নাম্বার ) তে আছে “। আমি আবারও রাগ টা চেপে “ওকে” বলে চলে গেলাম । আবার মাথায় একটা দুটো কথা হিট করলো , ‘ মেয়েটার কি সাহস ! প্রথমে এক্সচেঞ্জ তারপরে আবার বলে কিনা ডেকেও দেবেন ‘ ।
তারপর ৬৮ তে গিয়ে দেখলাম ওই ব্রাঞ্চ এর থ্রি সিটারের ধারে আমার বয়সী একটা ছেলে (যার সিট নাম্বার ৬৮) পাশে একজন মাঝ বয়সী লোক আর কোণে একটা বাচ্চা মেয়ে । ছেলেটার দিকে তাকাতে পরিষ্কার বোঝা গেলো এক্সপ্রেস ট্রেনে পাশাপাশি টিকিট পায়নি সেই দুঃখে ছেলেটা মনমরা ভাবে বসে আছে ,একটু ভালো করে ছেলেটাকে দেখলাম সত্যিই ছেলেটা বেশ হ্যান্ডসাম এবং দেখতে খুবই ভালো । তারপর মনে মনে ভাবলাম ‘ যার এরম বয়ফ্রেন্ড আছে তার তো আমার মত ছেলেদের কে আপনি বলতেই ইচ্ছে করবে , এরম বয়ফ্রেন্ডকে তো মিস করবেই মেয়েটা , সেটাই স্বাভাবিক । এরম জুটিও ভাগ্যের ব্যাপার। ‘ এসব ভাবতে ভাবতেই যেটা করতে এসেছি সেটা ভুলে গিয়েছি এরম অবস্থায় ওই ছেলেটার পাশের ওই মাঝবয়সী লোকটা বলে উঠলো , “কি ভাই ! দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি রাসলীলা দেখছো ? এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেনো ?” আমি বললাম “সরি সরি” , তারপর ওই ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বললাম ,” ভাইয়া , যাও তোমাকে তোমার বান্ধবী ডাকছে , আমি আমার সিট টা ছেড়ে এলাম “। তখন ছেলেটার মনে একটা অদ্ভুত আনন্দ অনুভব করলাম, তারপর ও তাড়াতাড়ি উঠে ব্যাংকার থেকে ব্যাগ নিয়ে ছুটে চলে গেলো । ওর খুশিতে আমারও মনটা কেমন যেনো ফুরফুরে হয়ে গেলো কিন্তু সেটা আর কতক্ষন , সিটে বসার আগেই পাশের ওই মাঝ বয়সী লোকটা সব শুনে বললো,”সিংগেল ? এরমই হয় তোমার মতো সিঙ্গেল পোলা দের”। ব্যাস আবার দিল আমার মুডটা বিগড়ে , রাগে তখন পুরো শরীর রগরগে হয়ে যাচ্ছে । তারপর আবার বললো ,”আরে দাঁড়িয়ে কেনো , বসো বসো” বলে হালকা একটু সরে গেলো । আমি আবারও রাগ টা সামলে নিয়ে কোনো বাক্য ব্যয় না করেই সিট টা গ্রহণ করলাম কারণ ট্রেনের মধ্যে সিন ক্রিয়েট করতে চায়নি । তারপর তো ওই লোক টা সারা রাস্তা বকবক করতে লাগলো , ” সিঙ্গেল দের এই হয় , সেই হয় , তাও ভালো লাগলো এই যুগে তুমি সিঙ্গেল শুনে ” , ইত্যাদি ইত্যাদি । তারপর মোবাইলটা পকেট থেকে বের করে গান শুনতে শুনতে কখন ঘুমিয়ে গেছলাম বুঝতেও পারিনি । কয়েক ঘন্টা পরে ঘুমিয়ে ঘুমিয়েই গন্তব্য স্থানে পৌঁছে গেলাম । ঘুম থেকে উঠে যখন গান বন্ধ করে ব্যাগ নিয়ে উঠলাম তখন যেনো এক নতুন জীবন পেলাম , পুরো ফ্রেশ মাইন্ড আগের সব কিছু ভুলেই গেছলাম কিন্তু সেটাও বেশিক্ষন হলো না ভুলতে তো দেবে না এরা। পরে সবাই যখন পুরুলিয়া তে নামতে গেলাম আবার ওদের দুজনের সাথে দেখা হলো । যথারীতি চোখে চোখ পড়ল , ওরাও মুচকি হাসলো ,আমিও হাসলাম । এতদূর ঠিকই ছিল কিন্তু পরে যেটা হলো ওটার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না । ওরা দুজনেই একসাথে বলে উঠল , ” ধন্যবাদ দাদা ” ( হেসে ) ।ওরা হেসে বললো কিন্তু আমার মুড টা দিল চটকে ( কারণ মেয়েটা দারুন দেখতে ছিল ) ।

[ বি দ্রঃ – এটা নিছকই একটা ছোট গল্প যেটা শুধুমাত্র আনন্দ দেবার জন্য লিখেছি । অন্যান্য গল্পের মত এই গল্পের সাথে বাস্তবতা কোনো রূপ ভাবে মিল নেই আর কারোর জীবনের সাথে মিল পাওয়া গেলেও আমি কোনো ভাবে দায়ী নয় । ]

Please rate this Post

No ratings yet.

Comments are closed.