অচেনা পরিচিতা – একচোখো
“অচেনা পরিচিতা”- কথাটা শুনতে হয়তো একটু বেমানান, সেরকমই অনেকটা আমার ২০২২।
আমার নিজের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে নিজেকে। কিন্তু অনেক চেনাকেও যেন অচেনা মনে হয়েছে তার মাঝে..
সব নতুন বছরের শুরুতেই আমরা একটা গোল, একটা লক্ষ্য স্থির করে ফেলি। যদি আমার কথাই বলি, আমিও বছরের শুরুতেই কিছু বিশেষ লক্ষ্য ভেবে নিয়েছিলাম..!! কিন্তু তাঁর ইচ্ছা, পরিকল্পনা আমাদের কল্পনাকেও চিন্তা করতে বাধ্য করে..
আজ এক বছর পর আমি যেখানে, সেটা কোনদিনও বছরে শুরুতে ভাবিনি, -এমনকি কল্পনাও করিনি যে আমি এরকম জায়গাতে থাকব.. কি মজার না!!
যদি মন থেকে বলি ২০২২ শুধু আমাকে দিয়েই গেছে, হয়তো অল্প কিছু নিয়েও নিয়েছে। কিন্তু আমাকে দুহাত ভরে দিয়েছে – সেটা আমার জীবনের প্রথম উপার্জনই হোক কিংবা কলেজ বন্ধুদের সাথে নতুন অভিজ্ঞতা কিংবা হোস্টেল লাইফ।
শুরুটা..
বছরের শুরুতে কখনোই ভাবিনি যে ব্লগিং ক্যারিয়ারে ঢুকবো.. ইন্টারনেটে পেশা বানাবো। কোথা থেকে যে কি চলে আসে, আর উৎসুকতা থেকেই.. যে কি হয়ে যায় বুঝতে পারিনা।
দেওয়া-নেওয়া তো জীবনে থাকবেই। শুধু দিয়ে গেছে বললে ভুল, হয়তো কাছের প্রিয় মানুষটাকে নিয়ে নিয়েছে – তার থেকে বেশি শূন্যতা আর কি হতে পারে!
তাই সব পেয়ে গেছি, সব পেয়ে যাব এরকম বলাটা নিছকই ছেলেমানুষী।
হয়তো একুশে পা দিয়েছি ঠিকই এবং এই অল্পকালেই যে বিরাট কিছু শিখে নিয়েছি তা নয়, তবে হ্যাঁ শিখতে শিখেছি..।
শুরু থেকে যদি বলি, বছরের শুরুতেই হয়তো দাদুকে হারানোর শোক ছিল.. কিন্তু মজার হলেও, বছরের শুরুতে আমি প্রথম নিজের উপার্জনের টাকা ব্যাংকের খাতায় পাই, তো স্বাভাবিকভাবেই দুঃখের মধ্যে আনন্দ তো থাকবে.. (তারিখটা আমি পরে দেখেছি – ৮ ই জানুয়ারি)।
প্রায় দু’বছর আমি অনলাইনে কন্টেন্ট বানিয়েছি, সেদিন যেই পরিশ্রমের মিষ্টি স্বাদ… সেই যে খুশি..
তবে সেই টাকা দিয়ে নিজের শখ পূরণ করিনি, কি করেছি সেটা আমি বলবো না.. গোপন থাক! অন্য কোনো গল্পে বলবো।
কলেজ ফ্রেসার্স!!
পরে ফেব্রুয়ারিতে যখন অফলাইনে কলেজ ক্যাম্পাস খুললো, তখন তো আসল মজা শুরু হলো।
হ্যাঁ হয়তো চেনাদের ভিড়েও অচেনা হয়ে গিয়েছিলাম, কিংবা উল্টোটা – অচেনাদের ভিড়ে হয়তো চেনা হয়ে উঠেছি, সেটা বন্ধুরাই ভালো জানবে।
তবে কলেজে গিয়ে প্রথম যেটা সবথেকে খুশি এবং আনন্দ হয়েছে সেটা হলো “প্রয়াস”- ফ্রেসার্স ওয়েলকাম। হ্যাঁ, এই ফ্রেসার্স-এর অনুষ্ঠানটা সকলেরই স্মৃতিতে থাকে, তবে আমাদেরটা একটু বেশিই থাকবে। কারণ আমাদের অলরেডি একবার ফেসার্স হয়ে গিয়েছিল অনলাইনে। তবুও আমাদের সিনিয়র দাদাদিদিরা আরো একবার অফলাইনে অনুষ্ঠানটা করে। মজা তো হয়, তার সাথে নিজেদের বন্ধুদের আরো কাছ থেকে জানতে পারি। আর আনন্দের কথাই বলো, আর মজার কথাই বলো আমি, “মিস্টার ফ্রেসার্স” হয়ে গিয়েছিলাম.. কি করে কে জানে!?
আমরা অনেক সময়ই সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে কনফিউজ হয়ে যায়.., সেরকমই আমার সাথে অনেকবার হয়েছে.. অনেকবার!! কিন্তু একটা কথা কোন সিদ্ধান্তই ভুল হয়নি। তুমি যদি ভুল সিদ্ধান্তই নিয়ে থাকো.. সেটা তোমাকে শিখিয়ে যাবে – যেটা হইতো কোনো কলেজ বা ভার্সিটি পারবে না।
হোস্টেলে আসার আগে মেসে থাকার সময় শেষ কদিন একটু বিশেষ উপভোগ করেছিলাম। তাছাড়া ছুটির পর যখন ব্লেন্ডেড মোডে পরীক্ষাগুলো হচ্ছিল.. শেষ সময়টা একসাথে থাকা, বন্ধুদের সাথে রাতে আনন্দ করা। তবে হ্যাঁ, আমার কাছে আনন্দ বলতে ওই একটু নাচ-গান আর রাত জেগে খিল্লি করা, আড্ডার আসর।
“হোস্টেল” – সেকেন্ড হোম!!
প্রথমে যখন সবেমাত্র কলেজ খুলল তখনও তো সব স্বাভাবিক হইনি.. বাধাধরা চলছিল (কোভিডের)। কিন্ত পরের সেমেস্টার -এ যখন হোস্টেলে এলাম যখন সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে গেছে।
জীবন যে কি তখন সেটা বুঝলাম হোস্টেলে এসে। প্রথমত, দীর্ঘ লকডাউন কাটিয়ে ছেলেরা এসেছে, অনেকেরই আবার প্রথম হোস্টেল লাইফ (তার মধ্যে আমিও পরি)। মাঝে হোস্টেলে এসেই একটু রঙচঙে হয়ে গিয়েছিলাম “প্রেম পিরিতের মধুতে”। যাইহোক এখন মহুয়ার নেশা কেটেছে আমার, আর এখন নেশা করছি না!! পরে ভেবে দেখব খন..
আগেই বললাম না কোন সিদ্ধান্ত ভুল হয় না, হয় তোমার সিদ্ধান্ত তোমার লক্ষ্যে পৌঁছে দেবে, কিংবা শিখিয়ে দিয়ে যাবে। তবে হ্যাঁ, তা বলে এই নয় যে সবসময়ে এটা চোখবুজে মানতে হবে।
হোস্টেলে একসঙ্গে থাকার সময়, মাঝে আমরা বন্ধুদের সাথে পরেশনাথ ঘুরতে যাই। সেটা নিয়ে হয়তো ভিডিও এবং ভ্রমণ কথা আমি শেয়ারও করেছি। ওটাই বন্ধুদের সাথে আমার প্রথম বাইরে বেড়াতে যাওয়া, কারণ স্কুল বা টিউশন কোথা থেকেও আমি আগে যাইনি। যাওয়ার সুযোগ থাকলেও এড়িয়ে গিয়েছি বরাবরই.!!
তাই ওই পরেশনাথ ঘুরতে যাওয়াটা আমার কাছে অনেকটাই স্পেশাল ছিল। জয় বাবা পরেশনাথ..
পুজোটা..
মাঝে বাবা মায়ের সাথে একবার দক্ষিণেশ্বর গিয়েছিলাম, গঙ্গাস্নান করে তার সাথে মায়ের দর্শন করে এলাম, সেটা যতটা সম্ভব ছুটির সময় ছিল।
বছরটা তো কেটে গেল, শেষ দিকে অক্টোবরে পূজোর ছুটিতে বাড়ি এসে অনেক কিছু করব ভেবেছিলাম। অনেক কিছু এবং অনেক আশা রেখেছিলাম (কোন একজনকে নিয়ে), কিন্তু কিছুই হয়ে ওঠেনি। তবে পুজোর কদিন বন্ধুদের সাথে বাইরে বেড়ানো, ঘুরতে যাওয়া, সময় কাটানো বেশ ভালই কেটেছে। আর হ্যাঁ, অনেকদিন পর সব বন্ধুদের সাথে দেখা হচ্ছিল, তাই আনন্দটা যেন আরো বেশি লাগছিল।। কারণ, “যা হয় ভালোর জন্যই হয়”- বুঝতে শিখেছি। তবে ছেলেমানুষী ভাবটা রয়েই গেছে, এখনো মেরে ফেলতে পারিনি।
হোস্টেলে এসে রুমমেট পেয়েছি অনিমেষ আর লক্ষণকে, তবে পরে যদি ওরা রুম শিফট করেছে..!! তখন আবার আমার একা থাকার অভ্যেসটাই কাজে দিয়েছিল, যদিও পাশের রুমের জামাই (অনির্বান) আর বাপ (সুরজীত) সঙ্গে সুশান্ত, একাকী ভাববে বুঝতে দেইনি।।
ডিসেম্বরের কথা..
তারপর আর কি, ডিসেম্বরটা পরীক্ষাতেই কাটলো। সেমিস্টার কদিন তো একটু চাপই মনে হচ্ছিল, পড়াশোনা তো সারা বছর সেরকম করিনি.. তবে যাই হোক করে উদ্ধার করে দিয়েছি। সে আমিই জানি, রেজাল্ট বের হোক দেখা যাবে তখন।।
সেমিস্টার শেষ হতেই আবার একবার বোলপুর বেরিয়ে এলাম বন্ধুদের সাথে। এটা ভালোই মজা করেছি, তবে এইটা গিয়েছিলাম কিছু কাছের বন্ধুদের সাথে। তারপর বাড়িতে এসে আর কি, ডিসেম্বর শেষ হতে গেল।
এখন মেঘপরীদের কনটেন্ট লিখছি, আগের যে পুরাতন ব্লগগুলো আমার ছিল, যেখান থেকে প্রধান উপার্জনটা আসতো – সেখানে তো কন্টেন্ট দেওয়াই হইয়ে উঠছে না। তো যাই হোক নতুন বছর আসছে অনেক নতুন নতুন প্ল্যান করছি.. জানি প্লান কাজ করবে না তবুও করতেই হয়..।
তাই ২০২২ টা আমার কাছে বেশিই স্পেশাল ছিল। হারানোর কিছুটা দুঃখ থাকলেও, পাওয়ার আনন্দের কাছে সেটা কিছুই না। আর হ্যাঁ, যেটা আজ নেই সেটা কাল হয়ে যাবে.. “আমি করে নেব!!” – সেই বিশ্বাস আছে তবে নতুন কাউকে, নতুন ভাবে নিজের মত করে।।
প্রিয় বন্ধুরা, এই ছিল আমার বাইশ, তোমাদের সাথে আমি আমার মনের কথা ভাগ করলাম। কেমন হয়েছে অবশ্যই কমেন্টে জানিও, আর যদি বেশি ভালো লেগে থাকে তাহলে শেয়ার করে দিও নিচের বাটনে ক্লিক করে। আর হ্যাঁ তোমাদের ও বছরটা কেমন কেটেছে জানিও, তোমাদের লেখার অপেক্ষায় রইলাম..।