পরেশনাথ ভ্রমন ডায়েরি (পার্ট-১) - একচোখো - MeghPori

পরেশনাথ ভ্রমন ডায়েরি (পার্ট-১) – একচোখো

Pareshnath-Blog-Diary-Travel

প্লান করতে হবে না !

একেবারে হঠাৎ করেই বেরিয়ে পড়া, 19 শে সেপ্টেম্বর রাতে গ্রুপে একটা মেসেজ করল সোমদীপ “যেদিন CA Exam শেষ হচ্ছে সেই দিন রাতেই পরেশনাথ যাওয়ার প্লান হচ্ছে, কেউ যেতে ইচ্ছুক থাকলে আমাকে বা তমজিৎ-কে মেসেজ করিস”।।

একদিনের মধ্যেই মোটামুটি সব গুটিয়ে প্লান করা হয়ে গেল (আদতে কিছুই প্লান হয়নি) কুড়ি তারিখ রাতের দিকে আমরা ট্রেনের টিকিটটা কেটে নিই ২১ জনের, 15 জন ছেলে আর 6 জন মেয়ে, অনির্বানের রুমে বসে সবাই টিকিটগুলো বুক করলাম (আদ্রা to পরেশনাথ, নন্দনকানন এক্সপ্রেস)।।

তারপরের দিন পরীক্ষা শেষ হতেই এসে প্যাকিং করে নিলাম। আসলে ট্রেনের প্রবলেম ছিল তাই সকাল করেই বেরোতে হবে।

যাত্রা শুরু – ম্যাজিক বাহনে

প্রথমে ভেবেছিলাম যে কলেজের সামনে থেকে ট্রেনে উঠে একবারে আদরাতে গিয়ে নন্দনকানন এক্সপ্রেস ধরা হবে কিন্তু ট্রেনের প্রবলেম চলছিল, (মাহাতো দের ‘দহর ছেঁকা’ ছিল) তাই আমাদেরকে আদ্রা পর্যন্ত বাসে যেতে হবে।।

চারটের দিকে মোটামুটি বেরিয়ে পড়া হল। আমরা ম্যাজিক ভ্যানে করে প্রথমে চাস মোড় গেলাম, তারপর সেখান থেকে পুরুলিয়া টাউন।

বাস বাবাজির ছেঁকা

পুরুলিয়া টাউন এ পৌঁছে গিয়ে দেখলাম যে ওখানেও বাস প্রবলেম, পরে কিন্তু আমরা হরির কৃপায় কোনমতে বাস একটা পেয়ে গেলাম ঠিকই, কিন্তু সে বাসে যা ভিড় দাঁড়ানো তো দূরের কথা পা রাখার জায়গা নেই।

কিন্তু আমাদের কাছে কোন উপায় নেই, আমাদেরকে তো যেতেই হবে কারণ সাড়ে আটটায় ট্রেন আছে, ট্রেন ধরতে হবে টিকিট অলরেডি বুক করা হয়ে গেছে।

সবাই মিলে কষ্ট করে এ ওর কোলে ঠেলে উঠে পড়লাম। সে যেভাবে আমরা গেছি সারা জীবন মনে থাকবে।

তবে তার মাঝে আমি একটু সাইজ করে বসার জায়গা করে নিয়েছিলাম কোন একটা সাউন্ড বক্সের উপরে.. কি জানি কি ছিল ওটা !!

সময়ের অনেক আগে আমরা পৌঁছে গিয়েছিলাম স্টেশন। কিন্তু কথা হচ্ছে রাতের খাবার দাবার নিতে হবে তো.. একটা হোটেল থেকে রুটি আর আলুর দম নিয়ে নেয়া হলো রাতে ট্রেনে খাবার জন্য।।

স্টেশনে গিয়ে সবাই মোটামুটি হাত-মুখ ধুচ্ছিল ফ্রেশ হচ্ছিল, কেউ জলের বোতলগুলো ভর্তি করে নিচ্ছিল কারণ অনেকটা দূর যেতে হবে তো।

ট্রেনমশাই এর দুষ্টুমি

যাই হোক কিছুক্ষণ পরেই বাহন মশাই ঢুকে গেলেন, এই ট্রেনে ওঠা একটা যে অভিজ্ঞতা হয়ে গেল এটাও সারা জীবন মনে থাকবে। মানে এ যে সে ট্রেনে ওঠা নয়, ব্যাপারটা কি হয়েছিল.. আমরা আমাদের কম্পার্টমেন্ট খুঁজে পাচ্ছিলাম না। একবার ট্রেনের সামনের দিকে যাচ্ছিলাম ওখানে আবার আরপিএফরা বলল যে ট্রেনের পেছনের দিকে, ছুটে গেলাম তখন ওখানে আবার দেখছি যে জেনারেল কম্পার্টমেন্ট, আমাদের কামরা প্রথমের দিকেই আছে। আবারও আমরা প্রথমের দিকে ছুটলাম এভাবে আমরা মোটামুটি বার তিন চক্কর লাগালাম।

এসে ট্রেন ছেড়ে দিচ্ছে দেখে আমরা একটা এসি কোচেই উঠে পড়লাম, কি আর করা যাবে!! ট্রেনের মধ্য দিয়েই চললাম, ফাইনালি আমাদের স্লিপারস কম্পার্টমেন্ট যেটা ছিল সেটা পেলাম.. “ইতনি খুশি..”, মানে এখানেই তো রানিং-ট্রেকিং হয়ে গেল।।

কু.. ও.. ঝিক ঝিক..

নামেই রিজার্ভেশন, গিয়ে দেখি আমাদের সিটগুলোতে অন্য লোকেরা শুয়ে আছে। কি আর করা যাবে ওই ভাবেই কোনমতে ম্যানেজ করে যে যার কোন একটা করে সিট নিয়ে নিলাম।

কেউ কেউ তো একেবারে দিল ঘুম, আমিও প্রথমের দিকে একটু শুয়েছিলাম। পরে ভাবলাম না Vlog বানাতে হবে, কিছু ভিডিও clips নিই।পরে শুরু হলো আসল মজা ট্রেনের মধ্যে।

শুরু হলো গোল টেবিল, এ ওকে নিয়ে খিল্লি – ও একে নিয়ে খিল্লি, আর আমিও তার মাঝে ক্যামেরা চালু রেখে সেইসব বন্দী করছিলাম।

যদিও মাঝে ট্রেনটা একবার দাঁড়িয়ে ছিল, তবু এভাবেই যে কখন ঘন্টা তিন কেটে গেল, আমরা ১০০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে এলাম বুঝতেই পারলাম না।

অপেক্ষার অবসান – বিদায় রেলমশাই

পরেশনাথ স্টেশনে নেমে ছেলে মেয়ে গোনা শুরু হলো, মানে এটা অভিষেক বলেছিল। আসলে সে যাই হোক আমি আবার সবার রিঅ্যাকশন নিতে শুরু করলাম, Vlog চলতে থাকলো আর আমাদের পা গুলোও।

আবারও যেতে হবে কিছুপথ

স্টেশনের বাইরে গিয়ে জানতে পারি এখান থেকে মধুবন অর্থাৎ যেখান থেকে পাহাড়ে চড়া শুরু হবে সেটা ২৫ কিলোমিটার।

So, এটার জন্য আমাদেরকে তো আবার গাড়ি করতেই হবে, প্রথমের দিকে কিছু গাড়িতে রেট অনেক বেশি বলছিল, পরে একটু এগিয়ে গিয়ে মোটামুটি আমরা ভালো গাড়ি পেয়ে গেলাম।

যাত্রা শুরু হল ২১ জনের তিনটে গাড়িতে এক একটা গাড়িতে সাতজন করে। মাঝপথে আবার একটা গাড়ি থেমে গেল কি যেন হয়েছিল, বলল পাংচার হয়েছিল নাকি। আমরা ভাবলাম এই গেল তারপর দেখছি না, হরি রেখেছেন তেমন কিছু হয়নি আবার যাত্রা শুরু হল, এক্কেবারে মধুবনে গিয়ে আমরা থামলাম।

আগে থেকেই আমরা জানতাম যে চড়ার আগে আমাদেরকে ওখানে গিয়ে প্রত্যেককে একটা করে লাঠি নিতে হবে নইলে যা চড়াই আছে পরে উঠতে কিন্তু অসুবিধা হতে হবে।

জয় বাবা পরেশনাথ – ট্রেকিং শুরু

লাঠি টাঠি নিয়ে ১ টা ১৫ নাগাদ আমরা ওঠা শুরু করলাম। ১১ কিলোমিটার ওঠা, প্রথমের দিকে অতটা অসুবিধা না হলেও পাঁচ-ছয় কিলোমিটার যাবার পর কিন্তু আর পা এগোচ্ছিল না। আর শেষের তিন কিলোমিটার তো মানে সেই ঢাল।।

আমরা মাঝে দু-তিনবার বসেছিলাম একবার কিছু  স্ন্যাক্স এর জন্য, আর তারপর একবার বসেছিলাম নিম্বু পানি খেলাম।

যাইহোক আমরা পৌনে চারটে নাগাদ প্রথম যে মন্দির সেখানে উঠলাম সে যে কি আনন্দ.. আহা..!!

আরতি হচ্ছিল চারটে নাগাদ, আরতি দর্শনের সৌভাগ্য হল। তারপরে আমরা ওখানে কিছুক্ষণ বসে ছিলাম, আমরাই প্রথম গ্রুপ ছিলাম যারা ওপরে প্রথম উঠেছিল মানে উঠতে পেরেছিল (আমি, অভিষেক, অনিমেষ আর প্রদীপ্ত)। তারপরে দেখতে দেখতেই বাকি গ্রুপগুলো এসে পৌছালো।

পরের পার্টটা অন্য একটা পোস্টে বলব কেমন.. আজ থাকুক।।

বন্ধুদের সাথে পরেশনাথ গিয়ে ফেঁসে গেলাম, ব্লগটা পড়ে কেমন লাগছে জানিও কমেন্টে 💞.. যাতে পরবর্তী পার্টটা খুব তাড়াতাড়ি আনতে পারি..।

Please rate this Post

5/5 (5)

Comments are closed.