“প্রেমিকার বিয়েতে”-আরেফবিল্লা মল্লিক
-আ… আই লাভ ইউ!
একপ্রকার ভয় নিয়েই পম্পা কে প্রপোজ করে বসলো রবিন।
“ভিখারির বাচ্চার সাথে আমি প্রেম করি না”-পম্পা অহংকারের সাথে বলে বসলো।
রবিনের মনে অনেকদিনের ফোটে ওঠা লাড্ডু নিমেষেই গরম তেলে ছাকা হয়ে উঠলো একপ্রকার পম্পার এই কঠিন জবাব শুনে।
রাগে,লজ্জায় লাল হয়ে শুকনো মুখে একপ্রকার দৌড়ে চলে যাই।
রবিনের মনে একটা প্রতিহিংসা জমে যায়!
তার মন ছটফট করছে সময়ের অপেক্ষায়, জবাব দেওয়ার জন্য।
রবিন ঠিক করে যেকোনো কাওকেই সে প্রপোজ করে পম্পা কে দেখাবে তার অকাদ।
ভাগ্য খারাপ!পৌলমী রবিন কে সাথে সাথেই না করে দেই!
ভেঙে পড়ে স্কুল ছেড়ে দেই রবিন।সবে মাত্র দশম শ্রেণী চলছিল।
ব্যাঙ্গালোর পাড়ি দেই বাড়ি-ঘর ছেড়ে। তার পর একপ্রকার সব কিছুই থেমে ছিল।
বছর দুই কেটে গেলো!রবিন বাড়ি ফিরে এসেছে।
স্কুলে তখন স্বরস্বতী পুজো চলছে।স্কুলের পাশেই, সামনের পুকুরে রবিন গেলো পা ধুতে।কিছুটা দূরে দেখে পৌলমী শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
রবিনের চোখ কিছুতেই হটছে না!
-উফ্ফ কি সেজেছে মাইরি!
তারপরেই পা হড়কে পুকুরে ধপাস!
জামা,মোবাইল সব গেলো ভিজে।পৌলমীর সে কি হাসি!
হাসতে হাসতে পৌলমী চলে যায়।
রবিন সোজা বাড়িতে চলে যায়,পুজো উপভোগ আর হলো না তার।
কিছুদিনে কেটে যায়। ফোন আসে রবিনের কাছে।
-হ্যালো,কে?
-পম্পা।
-ফোন করলে কেন?
-কেন কথা বলা চলে না নাকি?
-না!ঠিক তা নয়!
কথা চলতে থাকে। রবিন একপ্রকার দূর্বল মেয়েদের প্রতি।তাই পূর্বের রাগ অভিমান ভুলে যায়।
পরে রবিন জানতে ওর বন্ধুর কাছ থেকে পম্পা ফোন নাম্বার জোগাড় করে।
গাড়ত্ব বাড়তে থাকে ধীরে ধীরে।আবারো প্রপোজ হয়,দুইজন রিলেশনসিপে আসে।প্রতিদিন ফোন করা রবিনের একপ্রকার নেশায় পরিণত হয়েছে।
“তোমার সাথে দেখা করতে ইচ্ছে করছে! প্লিজ!”-রবিন কাতর সরে অনুরোধ করলো।
পম্পা না করলো না,বললো-
“কালকে মনসা মন্দিরের সামনে চলে আসো,ওখানে দিদি আর আমি পুজো দিতে যাবো”
কথা অনুযায়ী রবিন মনসা মন্দিরে গেলো,পম্পার সাথে দেখা!
পম্পার দিদি তখন পূজো দিচ্ছে মন্দিরের ভেতর।
এরই ফাঁকে এরা দুইজন জমিয়ে কথা সেরে নিচ্ছে।
হটাৎ দিদি বেরিয়ে আসে।দুইজন কে একসাথে দেখে ফেলে।
-কেরে ওটা?-দিদি জিজ্ঞাসা করলো।
একদম মুখ চুপসে গেছে পম্পার,ভয়ে!
-বাড়িতে চল তারপর তোখে দেখছি!
দিদি এই বলে পম্পার হাত ধরে টেনে নিয়ে চলে যায়।
রবিন ও হতাশ হয়ে ফিরে আসে।
“বল ওই ছেলেটা কে?না হলে বাবা কে এক্ষুনি বলছি”-রাগে গজগজ করতে করতে দিদি পম্পা কে বললো।
“প্লিজ দিদি বাবাকে কিছু বলিস না,সব সত্যি টা বলছি তোকে”-পম্পা ভয়ে বললো।
অনর্গল সব তাঁদের রিলেশনসিপ এর কথা বলে চললো।
কাহিনী শেষ হতেই দিদি বললো রবিনের ফোন নাম্বার টা দে।
“ওর নাম্বার নিয়ে তুই কি করবি দিদি?ছাড়না এবার!”-পম্পা চাপা গলা নিয়ে বললো।
-তোকে যেটা বলছি সেটা কর,নাহলে….!
-ব্যাস বুঝেগেছি!
এই নাও!
কেঁদেফেলার উপক্রমে পম্পা এখন।
পম্পার মাথায় একটাই চিন্তা,রবিন কে জানাতেই হবে যে দিদি যখন খুশি ফোন করতে পারে।
স্কুলে গিয়ে বন্ধুর ফোন থেকে রবিন কে ফোন করলো পম্পা!
“শোনো!,দিদি পুরো ব্যাপার টা জেনে গেছে,আর তোমার ফোন নাম্বার ও নিয়েছে,যখন খুশি ফোন করতে পারে,সাবধানে কথা বলবে,দিদি ভীষণ রাগী”-এই বলে পম্পা ফোন রেখে দেই।
“কতদিন চলছে?”
-ফোন রিসিভ করতেই রবিনের কানে ভেসে এলো।
“কি কতদিন চলছে,আপনি ই বা কে?”-রবিন জিজ্ঞাসা করলো।
-পম্পার দিদি আমি।
এটা শুনে রবিনের হৃদস্পন্দন ছারগুন বেড়ে গেলো!
“ছ ছ ছয় মাস চলছে আরকি”-কাঁপা সুরে রবিন জবাব দিলো।
-কি করো তুমি?
-জুয়েলারি ফ্যাক্টরি তে কাজ করি।
-কোন জাতের তুমি?
-চাষা।
-ঠিক আছে।
“আচ্ছা এতো কিছু কেন জিজ্ঞাসা করছো?”-রবিন প্রশ্ন করলো।
ফোন কেটে দিলো ঐদিক থেকে!
ভাবনা জুড়ে বসেছে রবিনের মনে।আগে কি হবে এই ভেবে।
দিন দুই যেতে না যেতেই বোম্ব বিস্ফোরণ করলো!
পম্পা আর রবিন মিলে মনসা মন্দিরের ওখানে ছবি উঠেছিল।আর সেই ছবি দিদি নিয়ে বাবার কাছে হাজির।
পম্পা কে তো ভাষা দিয়েই পিষে দিলো।
“লাগা ফোন টা হারামজাদা কে দেখি”-পম্পার বাবা দিদি কে বললো মেজাজ হারিয়ে।
রবিন ফোন ওঠাতেই তাকে বাবা মা তুলে উদুম খিস্তি দিতে শুরু করলো পম্পার বাবা।
রাখ তখন হবু শশুর!
রবিন ও নিজেকে সামলাতে না পেরে পম্পার বাবার চোদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করে দিলো।
সন্ধ্যায় পম্পার ফোন আসে….,
“আজ থেকে তোমার আমার মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই,ভুলেও আর ফোন করবে না”-পম্পা কঠিন হয়েই বললো।
রবিন কিছু বলতে চাইলে পম্পা ফোন কেটে দেই!
রবিন দুই তিন বার ফোন করে,অনেকবার ম্যাসেজ ও করে,বুঝতে পারে পম্পা ওর নাম্বার ব্লক করে রেখেছে।
আবারো ভাঙা বিষন্ন মনে ব্যাঙ্গালোর চলে যায়।
ডেইলি হোয়াটস্যাপ চেক করে,তবে কোনো ম্যাসেজ আসেনি।
প্রতিটা রাত তার কাছে যন্ত্রণার,ঘন্টার পর ঘন্টা ফোন করার স্মৃতি গুলো চোখে ভাসছে!
কান্না পেলেও পুরুষ মানুষের কাঁদা বারণ!
মাসছয়েক কেটে গেলো।একদিন পম্পার সেই নাম্বার থেকেই ফোন এলো,
-কেমন আছিস রে?
“তুমি থেকে তুই?তুমি আগে ঠিক করো আমাকে তুমি তুই বলবে না তুমি?”
-কেন?একজন বন্ধু হিসেবে তো কথা বলতেই পারি,
সেই ক্ষেত্রে তুই করেই বলবো।
-বল কেন ফোন করেছিস?
-কেমন আছিস তা জানতেই!
-ভালোই ছিলাম,তোর ফোন পাবার পর খারাপ হয়ে গেছি!
-নেকামো গুলো ছাড়তো এবার।
রবিন বরাবরই দূর্বল প্রকৃতির ছেলে,তাই তাঁদের বন্ধুত্বের সম্পর্কটাকে মেনে নেই।
আরো পাঁচটা বন্ধুদের মতোই কথা হয় এদের।
মাস তিনেক কেটে গেলো এইভাবে।রবিনের বাড়ি ফেরার সময় হয়ে এসেছে।দিন অনুযায়ী রবিন বাড়ি পৌছালো।
স্নান করতে গেলো রবিন।এসে দেখে পম্পার পনেরোটা মিসড কল।
রবিন কল ব্যাক করতেই ঝাঁঝালো সুরে আওয়াজ এলো,
“কিরে বাড়ি ফিরে একটা কল ও করতে নেই”
-আরে বাবা এইমাত্র এলাম তো।
-ঠিক আছে ফ্রেশ হয়ে নে আগে,রাখলাম।
প্রতিদিন কথা হয় এদের মধ্যে,একদিন পম্পা বলে বসলো,
“জানিস বাবা আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে”
“বাহ্!বেশ ভালোই করে নে বিয়ে!”-রবিন মজা করেই বললো।
“ইয়ার্কি মারছিস”-পম্পা রেগে গিয়ে বললো।
“আচ্ছা ছেলে কি করে রে?”-রবিন উৎসাহিত হয়ে প্রশ্ন করলো।
“কলকাতা তে অ্যালুমিনিয়ম ফ্যাক্টরীর ম্যানেজার”-পম্পা বললো।
রবিনের বুঝতে আর বাকি রইলো না, কেনই বা ওর দিদি রবিন কে তার কর্ম সংস্থান,জাত পাত নিয়ে প্রশ্ন করছিলো।আসলেই পুরো পরিবার ছিল ওদের টাকা ভক্ত।
পম্পার বিয়ের দিন ঘনিয়ে এলো!কার্ড বিতরণ চলছে।রবিন ও বাদ গেলো না।পম্পা বার বার অনুরোধ করেছে বিয়েতে আসতেই হবে।
রবিন কথা রাখলো।বিয়ের দিন গিফট নিয়ে হাজির পম্পার বাড়িতে।সামনেই দেখে পম্পার বাবা।দুজনেই দুজনের মুখের দিকে তাকিয়ে স্মৃতিচারণ করতে লাগলো,কি সুমধুর ভাষাতেই না গালাগালি দিয়েছে।
যাইহোক রবিন গিয়ে ঢুকলো পম্পার রুমে,গিফ্ট দিয়েই বেরিয়ে চলে এলো। যতই হোক মন তো ভাঙবেই…!
রবিন ভাবলো চলে যায় এখান থেকে।তারপর আবার ভাবলো,
নাহ!… একজন বন্ধু হিসেবে উচিত হবে না।
বাকুলের দরজায় দাঁড়িয়ে রবিন।ফোনের উপরে ফোন আসছে পম্পার।রবিন ফোন তুলছে না।
চার পাঁচজন বাচ্চা এসে হাতে ধরে টানতে টানতে বললো,
“ওই…!ওইইই দাদা,দিদি তোমাকে ডাকছে গো”
দেখলাম পরিস্থিতি খারাপ,যেতেই হবে।
গিয়ে বসলো রবিন পম্পার সামনে,মজা করছে সবাই পম্পা কে নিয়ে,রবিনও হাসার চেষ্টাই,তবে মুখ তুলে তাকাতে পাচ্ছে না।
বিদেয় হয়ে গেলো পম্পার।….
প্রথম রবিন মুখে সিগারেট নিয়েছে।সিগারেটের ধোঁয়ায় আবছা দেখা যাচ্ছে ওদের প্রেমলীলা!
তারপর….!তারপর ধোঁয়া শেষ!স্মৃতি হারিয়েছে।
বিয়ের পরেও রবিন কে পম্পা ফোন করতো সময় পেলেও,তবে আগের মতো আর হয়না।কখনো কখনো রবিন ইচ্ছে করেই ফোন তুলতো না।
“যদি আমি এখন তোর কাছে আশ্রয় চাই ফিরিয়ে নিতে পারবি”-ফোনে পম্পা কাঁপা স্বরে বললো।
রবিনের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো,নির্বাক রবিন!এ কি শুনছে সে!
রবিন সাথে সাথে পম্পার নাম্বার ব্লক করে দেই, সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে কিছু না জানিয়েই।
যেই মেয়েটা একদিন রবিন কে “ভিখারির বাচ্চা” বলেছিলো, সে আজ ভালো নেই!
সে আজ মাথা ঠুকছে আর বলছে,
“পয়সা পেয়েছি,ভালোবাসা হারিয়ে”
দাদা এভাবেই আরো ভালো ভালো লেখা আমাদের উপহার দিতে থাকো…🔥🔥🖤
ধন্যবাদ 😊
কেমন জানি তোর সেকেন্ড আ্যাকাউন্ট লাগছে👀 বিয়ের পরেও…
আরে না রে, মানছি আমার জীবন-গল্পের সাথে অনেকটাই মিল আছে….🙂❤️🩹