প্রেরনা
– আবির
“আজ্ঞে না; তুলনা নয় প্রেরনাই অভিযান” কথাটা শুনে মুখ নামিয়ে নিলাম আমি।
থেমে না থেকে; “এতো স্বয়ং বিভূতিভূষণ বলেছেন”-এই বাক্যটিও জোড়ের সাথে বলল সঞ্জীব।
আমি হাতের চিঠিটা তুলে দিলাম সামনে দাঁরিয়ে থাকা মেয়েটার দিকে। “তোমার নাম অর্পিতা তো?” হুম উচ্চরণ করে চিঠি হাতে নিয়ে ঘর থেকে বেরল মেয়েটি। কেমন ভাবহারা ভাবে সঞ্জীব যেন বলল কী সুন্দর না মেয়েটা অথচ এই অনাথ আশ্রম তার বাসস্থান….। ভাগ্যের এইতো পরিহাস।
“আচ্ছা ওদের মা-বাবারা যখন এমন প্রতি মাসেই চিঠি লেখে, ওদের বাড়িতে নিয়ে গিয়েই রাখতে পারে?”
“সে ওদের বাবা মায়ের খবর কী আর আছে?’হেঁয়ালি করে উত্তর দেয় সঞ্জীব।
“তবে এই চিঠি?”
“তুই নতুন শিক্ষক আমাদের বোর্ডিং স্কুলে আরো কিছু দিন যাক বুঝবি সব। “আর হ্যাঁ, প্রেরণাই অভিযান, এর প্রমাণ আমি দেবই!”
এই পর্যায়ে খুব অপ্রয়োজনীয় মনে হল কথাটা।
মেয়েটি ফিরে এল ঘরে “না এটা আমার চিঠিনা,আমার বাবা-মা ভালোই বাসেনা আমাকে চিঠিই দেয়নি। অন্যের বাবা-মা ওদের ছেলে-মেয়েদের কত ভালোবাসে..”কথা শেষ না করেই ফুপিয়ে কান্না জোড়ে সে।
আমার মনে হল, মন নিংড়ে মেয়ে যেন কেমন সব অভিমান গুলো জমা করল।
“আরে বাকিদের চিঠি কাল আসবে, হয়তো কালকেই তুমি চিঠি পেয়ে যাবে।”
সান্তনার সুরে বলল সঞ্জীব।
চিঠিটার দিকে আরেক ঝলক তাকিয়ে মাথা নিচু করে চাপা কান্না বুকে চেপে মেয়েটি বলে “আগের দু’মাস ও তো আসেনি কোনো চিঠি।” বলেই দৌড়ে চলে যায় মেয়েটি সেখান থেকে।
আমি আর সঞ্জীব তাকিয়ে রইলাম ওর চলে যাওয়ার দিকে। মনের অজান্তেই গলার কাছে জমাট বাধা এক রাশ হতাশা নিশ্বাস হয়ে বেড়িয়ে এল।
পরদিনও সঞ্জীবের সাথে চা খেতে আড্ডা দিচ্ছিলাম আমি। সঞ্জীব চায়ে চুমুক দিতে দিতে গত মাসের ব্যয়ের গড়মিল খুঁজে চলেছে।
আজও সেই মেয়েটি অফিস ঘরে এসে ঢোকে। “আজ কি আমার চিঠি এসছে সঞ্জীব স্যার।” – প্রশ্ন করে মেয়েটি।
সঞ্জীব আমার হাতে তুলে দেয় একটা চিঠি। মেয়েটার হাতের দিকে ওটা এগিয়ে দিতেই, যেন কিছুটা তাড়াহুড়ো করেই ছিনিয়ে নিয়ে নিতে যায় চিঠিটা। তবে এই মুহূর্তে চিঠির খামের উপর লেখা প্রাপক, প্রেরক আর তাদের ঠিকানার উপর চোখ আটকে যায় আমার। এই হাতের লেখা আমার কেমন যেন চেনা। আমি হটাৎ কী মনে হতে খাম খুলে বের করি চিঠিটা। পাশে রাখা সঞ্জীবের হিসেবের খাতাটার উপর চোখ যায় আমার, দুটো লেখায় মিল আছে অনেক।
এই মুহূর্তে মাথায় অনেকগুলো সম্ভাবনা ভিড় করে আসে।
বোকার মতো আমি তাকাই সঞ্জীবের দিকে। মেয়েটা চিঠিটি নিয়ে নেয় হাত থেকে। কালকের অভিমানটা চাপা পড়ে যেন একটা প্রশান্তির হাসি খেলে যায় মেয়েটার মুখে।
সঞ্জীব আমার মুখভাব দেখে কিছু একটা অনুমান করে। বাঁকা একটা হাসি দিয়ে
একপলক তাকায় সঞ্জীব আমার দিকে।
সঞ্জীবের করুন হাসিটা বড়ো অসহায় অধচ প্রয়োজনীয় লাগে আমার। মুহূর্তে নিজের কাজে আবার মন নিবেশ করে সে।
হয়তো “প্রেরনাই অভিযান” এই কথাটার আর নতুন করে প্রমান দিতে হবে না।