প্রিয়তমা রাই (প্রথম চিঠি) - ইশান - MeghPori

প্রিয়তমা রাই (প্রথম চিঠি) – ইশান

Priyotoma-Rai-Prothom-Chithi-Ishaan-Meghpori-Bangla

প্রিয়তমা রাই,
আর পাঁচটা দিনের মতো অভ্যেসের তাড়নায় আবার তোমাকে চিঠি লিখতে বসা..। আজ অনেকগুলো বছর পেরিয়ে গেল, আমি.. ভালোবাসি তোমায়।

না আমাদের কখনো কথা হয়নি! তুমি সামনে এসেছ বারবার, আমি ছোট্ট একটা হাই..ও বলতে পারিনি। তাও যেন কিভাবে, কেমন করে আমি যেন ভালোবেসে ফেলেছি তোমাকে।
তোমাকে আমার এক ফোঁটাও ভালো লাগে না.. জানো? তোমার আমাকে অবহেলা করা, আমাকে ঘৃণা করা..। কিন্তু আমি ভালোবাসি তোমায়, বারবার হাজারবার বলবো, “ভালোবাসি তোমায় রাই”।

তুমি যতবারই সামনে এসেছো, ততবারই আমার মনে- কালবৈশাখীর সময় বুড়ো তেঁতুল গাছের মাথায় বাসা বাঁধা বকের মতো অস্থিরতার তৈরি হয়েছে। বা ধরো, একটা বাচ্চার প্রথমবারের জন্য স্টেজ-পারফরম্যান্স দেওয়ার মতো।
আমি বরাবরই অনেক ইন্ট্রোভার্ট জানো তো, সেজন্যই হয়তো এতগুলো বছর পরেও তোমায় জানিয়ে উঠতে পারিনি। হয়তো তুমি অনেকের মুখে শুনেছো, হয়তো তুমিই চাইতে যে আমি নিজের মুখেই তোমাকে বলি। কিন্তু… কিন্তু আমি পারিনি বিশ্বাস করো, সাহস হয়ে ওঠেনি!!

মনে আছে সেই ছোটবেলায় প্রাইমারি স্কুলে প্রথমবারের জন্য তোমায় দেখা। তোমার বাবার সাথে আমাদের স্কুল এসেছিলে তুমি। উনি তখন হেডমাস্টার..
তারপর আস্তে আস্তে ভালো লাগতে শুরু করা, তোমার দিকে তাকিয়ে ক্যাবলা হয়ে যাওয়া..। তারপর প্রাইমারি ছেড়ে হাই স্কুল।
ক্লাস সেভেন…, কম্পিউটার ক্লাসে সেই রাখির দিন.. সবাইকে পড়ালেও আমার হাতে রাখি না বাঁধা। স্যার জিজ্ঞেস করাতে বলেছিলে, রাখি নাকি শেষ হয়ে গেছে.. কিন্তু আমি তখনও তোমার ব্যাগে কয়েকটা পড়ে থাকতে দেখেছিলাম।

শীতের দুপুরে রোদের মতো, আমার মনে কিরম একটা ভালো লাগা চলে এসেছিল..। সবকিছু ভালো লাগতে শুরু করেছিল। বাড়ি ফিরে মাকে জড়িয়ে ধরেছিলাম হাসি হাসি মুখ করে, কি হয়েছে জিজ্ঞেস করলে বলতে পারিনি কিছু.. হয়তো কিছু একটা হয়েছিল..!!

তারপর আমার একটা পরীক্ষার জন্য অর্ধেক রাস্তায় কোর্স ছেড়ে দেওয়া… আর তোমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ.. ইয়ে মানে.. তোমাকে দেখা বন্ধ।!

তারপর আবার অনেকদিন,.. অনেক বছর পর.. পিসিমণির গানের ক্লাস। তখন জানতে পারি, তুমি আমাকে ঘৃণা করো.. কারণ.. আমার জীবনে অনেক মেয়েরা এসেছে আর গেছে তার মাঝে সময়ে, তার জন্য।
আমি অনেকের সাথে জড়িয়ে পড়েছিলাম রাই.., কিন্তু আমি পারিনি, বিশ্বাস করো..!!
আগলে রাখার ক্ষমতা থাকেনি আমার.. কি করতাম ? আমি বরাবরই তোমায় ভালোবেসে গেছি.. বলতেই পারিনি শুধু।
জানিনা কবে বলতে পারব বা আদেও কোনোদিন পারবো কিনা..!?

হয়তো তোমার বিয়ে হবে.., হিম-পরা শীতের রাতের শেষ প্রহরে, গাঁদা ফুলের মালা গলায় নিয়ে, সবাইকে কাঁদিয়ে তুমি বিদায় নেবে..

আমার মালাটা হবে রুক্ষ্ম, শক্ত দড়ির..! একটা প্রান্ত সিলিংফ্যানে আটকানো.. এক.., দুই.., তিন..!!

ব্যস, বিদায়টা না হয় একসাথেই…
তবে তোমার ফুলশয্যার খাটে সাজানো রজনীগন্ধার সুগন্ধতা আমার গলাতেও থাকবে…, আর সেটাই চিরকালের জন্য আমাদের মিলিয়ে দিয়ে যাবে।
সেদিন শেষবারের মতো বলবো ভালোবাসি তোমায়, ভীষণ ভালোবাসি.. রাই..!!

Please rate this Post

3/5 (2)

Comments are closed.