জীবন হচ্ছে জাগ্রত মুহুর্তের কতগুলো অনুভূতির সমষ্টি । দিন আসে দিন যায়, মাস পেরিয়ে একসময় বছরও কেটে যায়। স্মৃতি-বিস্মৃতির দোলায় জীবন থেমে থাকেনা। সুখ-দুঃখকে বয়ে নিয়ে সেও ধেয়ে চলে। এরই মধ্যে স্কুলজীবন কাটিয়ে কলেজ জীবনে পদার্পণ করেছি।
তবে হঠাৎ করেই যেন ছন্দপতন ঘটলো, করোনা ভাইরাস এসে পৃথিবীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা স্তব্ধ করে দিল। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি শুরু হয়। এত দীর্ঘ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকেনি। অবশ্য এর মধ্যে একাধিকবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার উদ্যোগ নেওয়া হলেও সংক্রমণ বিবেচনায় তা কার্যকর করা যায়নি। বন্ধের সময় সরকার বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে অনলাইন ও টিভিতে ক্লাস প্রচার করলেও বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, সেগুলো খুব একটা কার্যকর হয়নি, এর মধ্যে অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রমও চালু করে সরকার। কিন্তু শ্রেণিকক্ষের বিকল্প কোনোটাই হতে পারে না।
করোনার সংক্রমণ নিম্নমুখী হওয়ায় ২০২২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি নিয়মিত ভাবে জাতীয় কারিগরি কমিটির পরামর্শে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।দীর্ঘ প্রায় ১৮ মাস বন্ধের পর শ্রেণিকক্ষে ফেরার এই আনন্দ-উচ্ছ্বাস ছিল প্রায় সারা দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রাণ হলো শিক্ষার্থী।
দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। সকাল ৮টায় কলেজের উদ্দেশে পা বাড়াতেই অনাবিল আনন্দে আমার মনটা ভরে উঠল। কিছু সময়ের ব্যাবধানে কলেজ গিয়ে হাজির হলাম। কলেজের সুউচ্চ ভবনগুলো আমাকে মোহিত করল। ছিল স্বাস্থ্যবিধি মানার কমবেশি চেষ্টা। কলেজে পৌঁছানোর কিছুক্ষন পর শুরু হল নবীন বরণ অনুষ্ঠান। তাদের বরণ করে নিতে ছিল নানা আয়োজন। কোথাও কোথাও ছিল গানবাজনা, ঢাকঢোল পিটিয়ে উৎসবের আমেজ।
নবীনদের রজনীগন্ধা ফুলের স্টিক, একটি কলম দিয়ে বরণ করা হল। ছিলেন আমার কলেজের কিছু সেরা ছাত্র। নবীনদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখলেন কলেজ সংসদের সাংস্কৃতিক সম্পাদক। এরপরেই শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখলেন কলেজের প্রিন্সিপাল স্যার।
তিনি তার বক্তব্যে এই ঐতিহ্যবাহী কলেজের সুনাম ধরে রাখার জন্য আমাদের দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন। পাশাপাশি ভালো ফলাফলের জন্য অভিনন্দন ও করলেন। আলোচনা পর্ব শেষ হলে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান গান, পরে নৃত্যানুষ্ঠান।
অনুষ্ঠান সবারই নজর কেড়েছিল। অনুষ্ঠান শেষে স্যার যার যার ক্লাসে যাওয়ার জন্য ঘোষণা দিলেন। পরে, হাত ধুয়ে বা হ্যান্ড স্যানিটাইজারের মাধ্যমে জীবাণুমুক্ত হয়ে ভিন্ন এক পরিবেশের মধ্য দিয়ে পুনরায় ক্লাসে ফেরার যাত্রা শুরু হলো।সকল শিক্ষার্থী যাতে দূরত্ব মেনে প্রবেশ করে, সে জন্য ঢোকার পথেই গোলাকার চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছে। দেওয়ালে ঝুলছে নানা সতর্কমূলক প্রচারপত্র।
শ্রেণীকক্ষে প্রবেশের আগে আমি নিজের মনেই বলে উঠলাম, “জীবনে প্রথম যেবার স্কুলে এসেছিলাম, আজকে এসে ঠিক একই অনুভূতি হচ্ছে।”
প্রথমদিন হল স্যারদের সাথে আলাপ – পরিচিতির পর্ব।
তিনি প্রথমে নিজের পরিচয় দিলেন পরে আমাদের পরিচয় ও নিলেন। স্যারের বাচনভঙ্গি আমাকে মুগ্ধ করল।
জীবনের সেই দিনই বুঝলাম চলমানতাই কলেজ জীবনের ধর্ম। সেদিনের অভিজ্ঞতা আমাকে বলে দিলো ,আমার কাছে অফুরন্ত স্বাধীনতা। তারপর দুপুর ৪ টা নাগাদ বাড়ি ফিরলাম।
দিনটি কখনই ভুলতে পারবোনা, স্মৃতির পাতায় চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।